রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন

যমুনায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে, বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি ॥ যমুনার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চরপৌলী, উত্তর চরপৌলী, কালিহাতী উপজেলার আলীপুর, হাট আলীপুর, ভৈরব বাড়ি, বিনোদ লুহুরিয়া, কুর্শাবেনু গ্রামে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। যমুনার ডান তীরে পাউবো স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করায় এবং যমুনার মাঝখানে নতুন চর জেগে ওঠার কারণে বাম তীরে ভাঙনের তীব্রতা বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

এ বছর বর্ষার আগেই গত এক সপ্তায় তীব্র ভাঙনে ইতিমধ্যে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীর পেটে চলে গেছে। গত দুদিনে ওই এলাকার তিন শতাধিক বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর সেতুর দেড় কিলোমিটার ভাটিতে নিউ ধলেশ্বরী নদীর মুখে (অফটেকে) পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) চারটি পৃথক লটে ২৩৪ কোটি ২৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকায় ১৫৩০মিটার গাইড বাঁধ (অফটেক বাঁধাই) নির্মাণ করে। এরপর যমুনার মাঝ বরাবর নতুন চর জেগে ওঠায় পানির তীব্র স্রোতের ফলে গাইড বাঁধের ১ নম্বর লটের বিভিন্ন অংশে ইতিমধ্যে ফাটল দেখা দিয়েছে। অফটেকের ভাটিতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে আলীপুর, হাট আলীপুর, ভৈরব বাড়ি, বিনোদ লুহুরিয়া, কুর্শাবেনু, চরপৌলী ও উত্তর চরপৌলী গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুদিনে এসব এলাকার পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন কবলিতরা অন্যের বা আত্মীয়ের বাড়িতে কেউ কেউ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। ভাঙনের আশঙ্কায় ওই এলাকায় বসবাসকারীরা বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছে।

সরেজমিনে জানা যায়, যমুনায় পানি বাড়ার সময় এবং পানি কমার সময় প্রতি বছর এসব এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। এ বছর বর্ষার আগেই ভাঙন শুরু হয়েছে। গত তিন দিন ধরে ভাঙনের তীব্রতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। নদী তীরের মানুষ ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। গাছও কেটে নিয়ে যাচ্ছেন-যাতে নতুন বাড়ি তৈরিতে কাজে লাগাতে পারেন। বঙ্গবন্ধু সেতুর ভাটিতে নিউ ধলেশ্বরীর অফটেক বাঁধাইয়ের পর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার কর্মযজ্ঞ চলছে।

ওই এলাকার আব্দুর রশীদ শেখ, খন্দকার আলমাস মিয়া, কাশেম মন্ডলের বাড়ি এ বছরের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের আভাস পেয়ে তারা আগেই ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন।

ওই গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর বেশির ভাগ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। অন্যরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বা আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাস করছেন। তাদের অনেক দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে।

স্থানীয় ইউনুস আলী জানান, প্রতিবছর এ এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। সরকার বা তাদের প্রতিনিধিরা সব জানেন এবং দেখেন। কিন্তু স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করেন না। সোবহান মিয়া জানান, এ এলাকার অনেককেই ভাঙনের কারণে এক জীবনে কয়েকবার ঘরবাড়ি সরাতে হয়েছে। মমিনুর রহমান মিয়া জানান, গত তিন বছরে তিনি ভাঙনের কারণে তিনবার বাড়ি স্থানান্তর করেছেন। এবারও সেই একই কারণে ঘরবাড়ি স্থানান্তর করতে হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড গত কয়েক বছর এলাকা রক্ষায় জরুরি প্রয়োজনে (ভাঙনের সময়) জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারপরও ভাঙনের ফলে নদীর সীমানা গত বছরের চেয়ে আড়াই শ’ মিটার পূর্বদিকে সরে এসেছে। এখন হাট আলীপুর মসজিদ, হাইস্কুল, মাদ্রাসা ও হাট আলীপুর বাজার এবং চরপৌলী মিন্টু মেমোরিয়াল হাইস্কুল, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাখিল মাদ্রাসা, উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হুমকির মুখে রয়েছে। যে কোন সময় ওই প্রতিষ্ঠানগুলো করালগ্রাসী যমুনা গিলে খাবে।

সদর উপজেলার কাকুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, মাত্র কয়েক দিনেই পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ জরুরি। না হলে আগামী ২-১ বছরের মধ্যে সদর উপজেলার মানচিত্র পাল্টে যাবে। বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদে জানিয়েছেন।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কালিহাতী উপজেলার দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম সিরাজ জানান, বঙ্গবন্ধু সেতুর ভাটিতে মাঝ বরাবর যমুনায় নতুন চর জেগে উঠেছে। ফলে পূর্ব তীরে যমুনার ভাঙন তীব্রতর হচ্ছে। এ ছাড়া যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করছে- এ জন্যও ভাঙনে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে তাতে জরুরি কাজ করে এ ভাঙন ঠেকানো যাবে না। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। দ্রুত সে কাজের দরপত্র আহ্বান করা হবে। আগামী শুষ্ক মৌসুমে ভাঙনকবলিত স্থানে স্থায়ী বাঁধের কাজ শুরু করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com